দেশজুড়ে বাড়ছে খাদ্য- জীবন বাঁচায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার। আবার কখনও এই জীবন নাশের কারণও হয়ে উঠে খাবার ও পানি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে— এমন এলাকায় প্রাণঘাতি সব রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
জানা গেছে, দেশজুড়ে বাড়ছে খাদ্য ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। খাদ্যে ভেজাল ও পানি জীবাণুযুক্ত হওয়ায় মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড ও প্যারা-টাইফয়েডে। দীর্ঘদিন দূষিত পানি পান ও ভেজাল খাদ্য খেয়ে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভিড় বাড়ছে। আগে দূষিত পানিতে শুধু সংক্রামক রোগ ছড়ালেও কয়েক বছর ধরে অসংক্রামক রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগী মারাও যাচ্ছে।
আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, প্রতিবছর দুই কোটি ২০ লাখ লোক টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় দুই লাখ ২০ হাজার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। সারা দেশের হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে জন্ডিস। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ধারণা, হালিশহর, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, বন্দরটিলা ও স্টিলমিল এলাকার অন্তত ২০ লাখ লোক জন্ডিসের ঝুঁকিতে রয়েছে অনিরাপদ পানি পানের কারণে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. আয়েশা আক্তার জানান, ‘অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কলেরা। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে, এমন অন্তত ২০ শতাংশ রোগী কলেরায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। চিকিৎসা নেওয়া ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে কত শতাংশ কলেরায় আক্রান্ত, এ তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে নেই।
তবে পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচতে জুমবাংলার পাঠকদের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, গরমকাল ও বর্ষার সময় যতটা সম্ভব বাইরের খোলা খাবার এড়িয়ে চলুন। গরমের কারণে অনেকেই রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া পানীয়, আখের শরবত, শসা, আনারস, লেবুর শরবতসহ নানা কিছু খেয়ে থাকে। আর এতেই বেড়ে যায় পানিবাহিত রোগের আশংকা। আর যেসব এলাকায় বন্যা কবলিত সেখানে পানি ব্যবহারে সতর্ক থাকুন, টাইফয়েড থেকে রক্ষা পেতে খাবার গরম থাকতে খান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন, কাঁচা সবজি ও ফলমূল জীবাণুমুক্ত করে তারপর খান আর বর্ষার কাদাপানি থেকে ঘরে ফিরে হাত-পা ভালো ভাবে সাবান ও জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে নিন।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) জরিপ মতে, কয়েক বছর ধরে দেশে খাদ্যবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস ও টাইফয়েড। আড়াই বছর ধরে আইইডিসিআর জরিপ চালিয়ে এমন তথ্য পায়। প্রতিষ্ঠানটি দেশের ১০টি বড় হাসপাতাল, সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুঠোফোনে বছরে দুবার তিন হাজার করে সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে তা খতিয়ে দেখে জরিপের ফল চূড়ান্ত করে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সোয়া তিন লাখ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। রোগীদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে শিশু। তাদের মধ্যে ৯০ হাজারের বেশি ডায়রিয়ার রোগী ঢাকার আইসিডিডিআর’বি হাসপাতালে ভর্তি হয়।